সবার কথা বলে

আ.লীগ নেতাকে মারধরের ঘটনায় উত্তপ্ত দুই গ্রুপ

0 368

আ.লীগ নেতাকে মারধরের ঘটনায় উত্তপ্ত দুই গ্রুপ- ছাত্রলীগের সংবাদ সম্মেলন

এস কে সালমান:

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আব্দুস সালামকে (৫০) মারধরের ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এর প্রতিবাদে মারধরকারীরা ছাত্রলীগের কেউ নয় দাবি করে বুধবার (৩ মে) বিকেলে উপজেলার টেকেরহাট নজরুল ক্লাবে উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাংবাদিক সম্মেলন করেন।

এ সময় রাজৈর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হাসান মুকিম বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে অবাঞ্চিত মন্তব্য ও দলীয় কর্মকান্ড বিরোধী আচরণ করায় আরও আগেই হাসিবুল হাসানকে জেলা কমিটির সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পিয়াল ছাড়াও তার সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। যারা আওয়ামী লীগ নেতার ওপর হামলা করেছেন তারা ছাত্রলীগের কেউ নয়, পিয়াল বর্তমানে বহিষ্কৃত ছাত্রনেতা। তার সঙ্গে ছাত্রলীগের কোন সম্পর্ক নেই। তার ভাইও ছাত্রলীগের কেউ নয়। যদি তারা ছাত্রলীগের পরিচয় দেয়, তাহলে তা সম্পূর্ণ মিথ্যে। ওরা যদি ছাত্রলীগে থাকতো তাহলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নিতে পারতাম।

এদিকে বুধবার (৩ মে) সকালে সালামকে পিটানো ও লাঞ্ছনার প্রতিবাদে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের রাজৈর উপজেলার বৌলগ্রাম এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আওয়ামীলীগের একাংশ ও আব্দুস সালামের অনুসারিরা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে রাজৈর উপজেলা চত্তরে সালাম তাঁর ব্যবহৃত মোটরসাইকেল নিয়ে জমি রেজিস্ট্রেশনের জন্য সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে যান। সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের প্রবেশ করতেই তাঁর মোটরসাইকেলের গতিরোধ করেন উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশের নেতা হাসিবুল হাসান ওরফে পিয়াল। পরে পিয়ালের ভাই আশিকুর রহমান ওরফে পাভেলসহ ১০ থেকে ১২ জন মিলে তাকে বেদম মারধর করে। একপর্যায়ে সালামকে উপজেলা চত্বরের পুকুরে ফেলে দেয়। এ সময় তাঁর ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও পুকুরে ফেলে দেয়া হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানায়, ‘১৫ আগস্ট’ উপলক্ষে গত ৩১ আগস্ট খালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আব্দুস সালাম। এ সময় সালাম উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক অংশের যুগ্ম আহবায়ক ফরিদা হাসান পল্লবীর সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর ফরিদা হাসান বাদী হয়ে সালামসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ তুলে মামলা দেন। এরই জের ধরে ফরিদা হাসানের দুই ছেলে পিয়াল ও পাভেলসহ ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা সালামকে একা পেয়ে মারধর করেন।

মারধরের শিকার আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার আব্দুস সালাম বলেন,’আমার একটি জমির দলিল হওয়ার কথা ছিল। এ কারণে উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারের অফিসে যাই। উপজেলায় প্রবেশ করার পরেই পল্লবীর উপস্থিতিতে আমার ওপর অর্তকিত হামলা চালায় তাঁর ছেলেরা। আমাকে মারধর করে আমাকে পুকুরে ফেলে দেয়। পুকুরে পানির ভিতরে নেমেও ওরা আমাকে মাইর শুরু করে। আমার পড়নে পাজামা ছাড়া সব ছিড়ে ফেলেছে। পরে আমার মোটরসাইকেলটিও ওরা পুকুরে ফেলে দেয়। আমার পকেটে দলিল খরচের জন্য দুই লাখ টাকা, একটি সোনার চেইন, হাতঘড়ি, মোবাইল ফোন ছিল। মারধরের সময় ওরা আমার কাছে যা ছিল সব নিয়ে গেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।

অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে রাজৈর উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশের নেতা হাসিবুল হাসান ওরফে পিয়াল মুঠোফোনে বলেন, ‘তিনি (খন্দকার আব্দুস সালাম) সিনিয়র মানুষ, তাকে কেন মারধর করবো? আমি রাজনীতি করি, তাই আমার দিকে আঙ্গুল কেউ তুলতেই পারে। তবে আমি যখন উপজেলায় যাই তখন দেখি তিনি উপজেলার পুকুরে ভিতরে। পরে তাকে পুকুর থেকে তুলেছি, সমস্যার কথা শুনেছি। পরে যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক খালিদ ভাই তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। আমি শুনেছি, তিনি (খন্দকার আব্দুস সালাম) কোন এক লোকের সঙ্গে মোটরসাইকেলে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলসহ পুকুরে পড়ে গেছে। তার আগে কিছু ঘটছে কিনা তা আমি জানি না।’

এ বিষয় রাজৈর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘রাজৈরে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ। একটি পক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ মোল্লার অন্যটি স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খানের। মারধরের শিকার আওয়ামী লীগ নেতা আওয়ামী লীগের সভাপতির অনুসারি। তাকে যারা মারধর করেছে তারা সংসদ সদস্যর অনুসারী। মারধরের শিকার সালামের গুরুতর তেমন কোন আঘাত নেই। তবে তাকে চরথাপ্পর ও কিল-ঘুষি মারা হইছে। তার হার্টে ওপেন সার্জারি করা। তাই এখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

রাজৈর থানার ওসি মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, অবরোধকারীদের বুঝিয়ে তাদেরকে ফেরত পাঠানো হয়।

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.