0 322
চাঁদা চেয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখায় বাদীর ৫ লাখ টাকার অপচয়: পিবিআই প্রতিবেদন।
মোহাম্মদ জুবাইর:
গত বছর চট্টগ্রাম হালিশহর থানাধীন রামপুর এলাকায় বাড়ি নির্মাণকে কেন্দ্র করে চাঁদা আদায়ের লক্ষ্যে শ্রমিকদের উপর নির্যাতন, চুরিসহ বাড়ি নির্মাণে বাধা’র যে অভিযোগ উঠেছে তার সত্যতা পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। কাজে বাধা পেয়ে উক্ত এলাকার মৃত বদিউজ্জামান এর ছেলে মোহাম্মদ মিজানুর রহমান (৫৯) বাদী হয়ে চট্টগ্রাম বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পঞ্চম আদালতে পাঁচজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার সি.আর মামলা নং- ৪৩৮/২০২২। উক্ত মামলার আসামিরা হলেন- একই এলাকার মৃত তফজ্জল আলীর তিন সন্তান মোঃ ইউসুফ, আরজ (মোঃ হারিছ) ও মোঃ আইয়ুব, ইয়াছিন আলীর ছেলে মোঃ ইসমাইল (খোকন) এবং মৃত ছালে আহম্মদ এর ছেলে ইয়াছিন আলী।
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান একজন অবসর প্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা। স্বপ্ন নিজের সন্তানদের সুখের জন্য শেষ বয়সে এসে একটা বাড়ি করবেন। তাই নিজের সারা জীবনের অতি কষ্টের জমানো টাকা ও অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী গৃহ নির্মাণ ঋণ নীতিমালা-২০১৩ অনুযায়ী ৪০ লক্ষ টাকার ঋণ গ্রহণ করেন হাঁটতে থাকে বাড়ি নির্মাণের দিকে। কিন্তু কে জানে সন্ত্রাসীদের বাধায় বন্ধ হবে নির্মাণ কাজ। তাই হলো। পাঁচ সন্ত্রাসীর ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির কাছে বন্ধ করতে হয়েছে স্বপ্নের নির্মাণ কাজ। কেবল মিজানুর রহমানের স্বপ্নই ভঙ্গ হয়নি, স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে পরিবারের প্রতিটি মানুষের কাছে। জীবনের শেষ সঞ্চয়টুকু দিয়ে যে নির্মাণ সামগ্রী (রড, সিমেন্ট ও বালি) কিনেছিল তার সবটুকু নষ্ট হয়ে এই পরিবার এখন পথে নেমেছে। এমন চিত্রই উঠে এসেছে পিবিআই এর প্রতিবেদনে।
মিজানুর রহমান তার অভিযোগে উল্লেখ করেন- তার মা মৃত মজুফা বেগম খরিদা সম্পত্তি অন্যান্য শরীকদের সম্মতিক্রমে ১৭৬৮ নং বন্টননামা দলিল মূলে (হালিশহর থানাধীন মধ্যম রামপুর,বৌ বাজার শফি হাজীর বাড়ির গলিতে বাদী মিজানুর রহমান এর নির্মাণাধীন দালান সংলগ্ন পূর্ব পাশের রাস্তার উপর) উল্লেখিত তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি প্রাপ্ত হন এবং প্রতিবছর নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করতো। ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর বি.এস দাগ নং- ১৬৯৭/১৬৯৮ দাগের উপর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেয়ে তিনি তফসিল বর্ণিত সম্পত্তিতে দালান নির্মাণের কাজ শুরু করেন। দালানের প্রথম তলার গ্রেড বীম নির্মাণ অন্যায় দাবিতে বিবাদী পক্ষ বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিছ মামলা দায়ের করেন। মিছ মামলা নং ১১২৩/২০২১ এবং মিছ মামলা নং- ২৮৮/২২ আদালত কর্তৃক বাদীর অনুকূলে খারিজ হওয়ার পর তিনি তার ১৬৯৭/১৬৯৮ দাগের অন্দরে দুই শতক (এক গন্ডা) জমির উপর নির্মাণ কাজ করতে গেলে সকল বিবাদী তার নিকট নির্মাণ কাজ বাবদ ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। গত বছরের ২২ মার্চ ২৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বরাবর এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে আসামিরা স্থানীয় কাউন্সিলরকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে গত ২৮ সেপ্টেম্বর সকালে সম্পত্তিতে নির্মাণ কাজ করার জন্য মিস্ত্রি আসলে বিবাদীরা তার দারোয়ান, শ্রমিক এবং মিস্ত্রির
উপর আক্রমণ করে রক্তাক্ত ও জখম করে। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় অভিযোগ করেও দ্বিতীয় দফায় ১৮ অক্টোবর সকালে পুনরায় রাজমিস্ত্রি কাজ করতে গেলে সকল বিবাদীরা হাতে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালায়। মারধরের পর আসামিরা একটি ভ্যান গাড়ি এনে নির্মাণ কাজের ১৫ বস্তা সিমেন্ট, লোহার রড ও সেন্টারিং কাঠ ইত্যাদি নিয়ে যায়। যার মূল্য ৭০ হাজার টাকা।
গত ২৬ অক্টোবর উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে আদালত অনুসন্ধানের জন্য পুলিশ সুপার, পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো’কে নির্দেশ প্রদান করেন। সেই মোতাবেক ঘটনার সত্যতা অনুসন্ধান করে ১১ ফেব্রুয়ারি আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন পিবিআই।
পিবিআই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, নালিশী বি.এস ১৬৯৩ নং দাগের সম্পূর্ণ জমি বর্তমানে বাদী (মিজানুর রহমান) এর দখলে রয়েছে। বিবাদীদের দখল পাওয়া যায়নি। মামলার বাদী কর্তৃক উপস্থাপিত এবং যাচাইকৃত ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ রসিদ পর্যালোচনায় দেখা যায়- তিনি তার ভোগ দখলীয় ভিটা/নাল শ্রেণির দখলীয় জমি, যার খতিয়ান নম্বর-৩৭৮৯, দাগ নং-১৬৯৭/১৬৯৮, জমির পরিমান – ০.০৪২৮ এর অনুকূলে গত ১০ আগস্ট ৬২৫ টাকা খাজনা পরিশোধ করেন। যাতে প্রমাণিত হয়, বাদী মিজানুর রহমান উক্ত জমির বৈধ মালিক।
বিবাদীরা যে বাড়ি নির্মাণের সময় চাঁদা দাবি করে শ্রমিকদের উপর যে নির্যাতন চালিয়েছে তার সত্যটা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলেন, বিবাদীরা বাধা দেয়ার ফলে বাড়ির নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত অবস্থায় আছে। যার ফলে নির্মাণের জন্য ক্রয় নির্মাণসামগ্রী ইট, বালু, রড ও সিমেন্ট নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে বাদী প্রায় ৫ লক্ষ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জিশু রায় চৌধুরী বলেন, পিবিআই তদন্ত রিপোর্টের মাধ্যমে সত্যের বিজয় হয়েছে। মামলার বাদী মিজানুর রহমানের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। তার বাড়ি নির্মাণের সকল নির্মাণ সামগ্রী ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। শুনলাম এখনো নাকি বাদীর উপর নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। আশা করি এই প্রতিবেদনের আলোকে বিজ্ঞ বিচারক প্রত্যাশিত রায় দিয়ে আমাদের বাধিত করবেন।
মামলার বাদী মিজানুর রহমান শঙ্কার কথা তুলে ধরে বলেন, এই মুহূর্তে আমিও আমার পরিবার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। তাছাড়া আমার অর্থনৈতিক অবস্থাও ধ্বংস হয়ে গেছে। কোন অবস্থাতেই বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারছি না। আমি সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।