সৈয়দপুরে সরকারীভাবে সাহায্য পেলে ৬শ ঝুট কাপড়ের গার্মেন্টসে বাড়বে রাজস্ব আয় ও কর্মসংস্থান
মো: মাসুদুর রহমান
সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিবেদকঃ
নীলফামারীর সৈয়দপুরে গড়ে উঠেছে ঝুঁট কাপড়ের ছোট-বড় ৬শ কারখানা। গার্মেন্টসগুলো মূলত, ফেলনা কাপড় দিয়ে সম্পদে পরিণত করে। এসব কারখানায় জীবিকা নির্বাহ করছেন উপজেলার প্রায় চার হাজার নারী-পুরুষ। এসব প্রতিষ্টান থেকে প্রতি বছর জ্যাকেট, শার্ট, টাই, টিশার্ট সহ অন্যান্য পোশাক তৈরি হয়। এর মধ্যে অধিকাংশই ভারত, নেপাল, ভুটানে যায়। দামে কম ও মানে ভালো হওয়ার কারণে বিদেশে আমাদের তৈরি পোশাকের চাহিদা বেশি। । তবে কারখানা গড়ে তোলার মতো পর্যাপ্ত স্থান না থাকা ও পুঁজি সংকটের মতো প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। ফলে সম্প্রসারিত হচ্ছে না সৈয়দপুরে আর্থিক স্বচ্ছলতা এনে দেওয়ার এই খাত।
জানা গেছে, গত কয়েক বছরে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর শহরে ঝুট কাপড় দিয়ে পোশাক তৈরির জন্য গড়ে উঠেছে প্রায় ৬শ ছোট-বড় কারখানা। আর এসব পোশাক রফতানিতে কাজ করে যাচ্ছে অসংখ প্রতিষ্ঠান। এসব কারখানায় গত কয়েক বছরে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় চার হাজার নারী-পুরুষের। বিশেষ করে এলাকার নারীরা এতে করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার পথ পেয়েছেন। ঝুট কারখানাগুলোতে কর্মরত শ্রমিকরা এখন নিজেদের পরিবারের খরচ মেটাতে পারছেন, সন্তানদের লেখাপড়াও করাচ্ছেন।
ব্যবসায়ীরা ঢাকার মিরপুর, কালীগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, টঙ্গী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন স্থানের পোশাক কারখানাগুলো থেকে ঝুট কাপড় কিনে আনেন। পাশাপাশি সুতা, বোতাম, ইলাস্টিক, প্যান্টের পকেট বানানোর স্টিকার, পুরোনো সেলাই মেশিনও সংগ্রহ করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। ঝুট কাপড় থেকে কারখানাগুলোতে তৈরি হচ্ছে ট্রাউজার, শর্টস (হাফ প্যান্ট), জ্যাকেট, টি-শার্ট, জিনস প্যান্টসহ নানা ধরনের পোশাক। দেশের চেয়ে এই পোশাকগুলোর চাহিদা ভারত, নেপাল ও ভুটানে বেশি বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
ঝুট কারখানা সাথে জড়িত ফিরোজা বেগম নামে এক শ্রমিক জানান ‘স্বামী পরিত্যক্ত হওয়ার পর চলার মতো অবস্থা ছিল না। এখানে চার বছর ধরে কাজ করছি। এই কারখানা থেকে আয় করা টাকাতে এখন ছেলে-মেয়ের পড়ালেখাও করাচ্ছি।’
ঝুট কারখানার তৈরি পোশাক রফতানিকারক গার্মেন্টেস মালিক আনোয়ার হোসেন এক পরিসংখ্যানের তথ্য থেকে জানান, গার্মেন্টেসর ঝুট কাপড়ের তৈরি পোশাক খাত থেকে সৈয়দপুরের রফতানিকারকরা বছরে প্রায় ৭ লাখ মার্কিন ডলার আয় করে থাকেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, নিজস্ব জায়গা না থাকায় সৈয়দপুর শহরের রেলওয়ের জমিতে ছোট ছোট টিনের চালা ঘর তুলে সেখানে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট কারখানা। এসব কারখানায় তৈরি হচ্ছে প্যান্ট, হাফ প্যান্ট, থ্রি পিস, থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, শার্ট ও জ্যাকেটসহ বিভিন্ন পোশাক। স্থানীয় কারিগরাই এসব পোশাকে জুড়ে দিচ্ছেন আকর্ষণীয় সব ডিজাইন।
এলাকাবাসী জানান ‘এসব কারখানায় কর্মরত প্রায় চার হাজার শ্রমিক পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বচ্ছন্দ্যে জীবিকা নির্বাহ করছে। কিন্তু রেলওয়ের জমি হওয়ায় কারখানাগুলো সবসময় উচ্ছেদের আতঙ্কে থাকে।’
এলাকাবাসীরা বলছেন, সরকারি সহায়তা মিললে সৈয়দপুরের পোশাক তৈরির এই খাতটি ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হতো।
ঝুট কাপড় ও উপকরণসমূহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কেনা হয় কেজি হিসেবে। এর মধ্যে প্রতি কেজি ব্লেজারের ঝুট ৭৫ থেকে ১৬০ টাকা। জ্যাকেট তৈরির ঝুট ১২০ থেকে ১৮০, গ্যাবার্ডিন প্যান্টের ঝুট ৯০ থেকে ১৭০, জিনসের ঝুট ৯০ থেকে ২০০, জিপার ৮০ থেকে ১৫০, সুতা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে কিনতে হয় বলে ব্যবসায়ীরা জানান। এসব থেকে তৈরি করা পণ্য ২০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করা হয়।
এখানে প্রায় প্রতিটি বাড়িই যেন ছোট ছোট পোশাক কারখানার রূপ নিয়েছে। একেকটি বাড়িতে ৩ থেকে ৪৫টি মেশিনে সারা বছর চলে কাজ। সৈয়দপুরের কারখানা মালিকরা ও ব্যবসায়ীরা তাই সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, এখানে যেন ক্ষুদ্র গার্মেন্টস পল্লী স্থাপন করা হয়। এতে এলাকাবাসীর কর্মসংস্থান যেমন হবে, সরকারও রাজস্ব আয় করতে পারবে।