২ দিন পর ফেরত দেওয়া হলো বিএসএফের গুলিতে নি হ ত স্কুলছাত্রের লা-শ
মোঃ সাইফুল ইসলাম - সংবাদের পাতা:
ঠাকুরগাঁয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত জয়ন্ত কুমার সিংহ (১৪) এর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা সীমান্তের ৩৯৩ মেইন পিলারের ৪ সাব পিলার দিয়ে তার লাশ হস্তান্তর করে বিএসএফ।
নিহত জয়ন্ত কুমার সিংহ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের বাবরিভিটা গ্রামের বাসিন্দা শ্রী মহাদেব কুমার সিংহ পুত্র। সে স্থানীয় লাহিড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। জয়ন্তের মৃত্যুর খবরে পুরো এলাকা জুড়ে চলছে শোকের মাতম।
গত সোমবার ভোররাতে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের ধনতলা সীমান্তের ৩৯৩ মেইন পিলার এলাকায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে তার লাশ বিএসএফ নিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। সোমবার রাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৫০ ব্যাটালিয়নের একটি দল জয়ন্তের বাড়িতে যায়। এ সময় খবরটি এলাকায় জানাজানি হয়।
মা অধিতা রাণী বলেন, তাদের এক ছেলে এক মেয়ে। তার বাবার বাড়ী ভারতে হওয়ার সুবাদে তার স্বামী শ্রী মহাদেব কুমার সিংহ ছেলে জয়ন্ত কুমারকে সঙ্গে নিয়ে সোমবার ভোররাতে স্থানীয় দুই দালালের সহযোগিতায় ধনতলা সীমান্তের ৩৯৩ মেইন পিলার দিয়ে চোরাই পথে ভারতে নানার বাড়ী যাওয়ার চেষ্টা চালান। এ সময় তাদের সঙ্গে আরো কয়কটি দম্পতিও ছিলেন। রাত ৩টার দিকে ভারতের উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর থানার ডিঙ্গাপাড়া ক্যাম্পের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে পৌঁছালে বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। এতে জয়ন্ত ঘটনাস্থলে মারা যায়। তাদের সঙ্গে থাকা দম্পতিও আহত হন। গুলি থামার পর ঞ্জয়ন্ত কুমার ও তার বাবাসহ স্থানীয় আরো বাকিরা বাবরিভিটা গ্রামের একটি বাড়িতে ঢুকে আশ্রয় নেন। পরে নিহত জয়ন্ত কুমারের বাবা শ্রী মহাদেব কুমার সিংহ ৪৫) ও তার বন্ধু বাংঠু মোহাম্মাদ (৪০) মিলে চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ভান্ডাদহ গ্রামের সামশুল হক ও মতিউর রহমান বাড়িতে আশ্রয় নেন তারা। সামসুল হক বলেন, ‘সীমান্তের কাছেই আমাদের বাড়ি। সেদিন রাতে হঠাৎ তিনজন লোক ডাকাডাকি করতে থাকেন। পরে দেখি দুজন গুলিবিদ্ধ। তারা ঘটনা খুলে বলেন। পরে বিজিবির ধনতলা বিওপির দায়িত্বে থাকা লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। গুলিবিদ্ধ দুজনকে দ্রুত রংপুর হাসপাতালে পাঠাই। তারা দুজনেই গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। তার কাছ থেকে নাম-ঠিকানা জেনে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করি।’ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সমর কুমার চ্যাটার্জী নুপুর জানান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর পক্ষ থেকে জয়ন্ত কুমার সিংহে মৃত্যুর খবরটি আমাকে জানানো হয়। লাশ বিএসএফ নিয়ে গেছে। দুইদিন পরে রাত দেড় টায় পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে লাশ ফেরত দেওয়া হয়েছে। লাহিড়ী বহুমখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিল্লুর রহমান জানান, ‘জয়ন্ত' খুবই মেধাবী ছিল। পড়ালেখা, ছবি আকায় সবদিক দিয়ে সে ভালো ছিল। বিদ্যালয়ে খেলাধুলাসহ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সে জড়িত থাকত।’
বিজিবির ৫০ ব্যাটালিয়নের ধনতলা বিওপির টহল কমান্ডার নায়েক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কয়েকজন বাংলাদেশি চোরাইপথে ভারতে যেতে চেয়েছিলেন। এর মধ্যে একজন বিএসএফের গুলিতে মারা যায়।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও ব্যাটালিয়ন (৫০ বিজিবি) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল তৌহিদুর রহমান জানান,খবর পেয়ে বিজিবি ও বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক হয়। এরপর ভারতীয় পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে বিজিবি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টায় থানা পুলিশের কাছে জয়ন্তর লাশ হস্তান্তর করে। বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ কবির জানান, আইনি প্রক্রিয়া শেষে তারা জয়ন্ত কুমার সিংহের লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করেছে।
রাত ২টায় পারিবারিক শ্বর্শ্বান ঘাটে তার শেষ অন্ত:সূষ্ঠি সৎকার সম্পন্ন করা হয়। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা বিওপি সীমান্তের ওপারের ভারতীয় উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর থানার ডিঙ্গাপাড়া ক্যাম্পের বিএসএফ'র গুলিতে বাংলাদেশী যুবক শ্রী জয়ন্ত কুমার সিংহ (১৫) নিহত হয়। সংবাদ পেয়ে নিহতের বাবা শ্রী মহাদেব কুমার সিংহ (৪৫) ও তার বন্ধু বাংঠু মোহাম্মাদ (৪০) মিলে কিছুক্ষণ পরে নিহত সন্তানের মরদেহ আনতে ঘটনাস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিএসএফ তাদের লক্ষ করে আবারো গুলি ছুড়েলে এতে তারা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় কোন রকমে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ঘটনাস্থল থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়। উল্লেখ্য যে, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বাবরিভিটা বেলপুকুর গ্রামের মহাদেব কুমার সিংহের পুত্র জয়ন্ত কুমার সিংহ ভারতে কাজের সন্ধানে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে ধনতালা বিজিবি সীমান্তের ৩৯৩ মেইন পিলারের নিকট দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে এসময় ভারতীয় ডিংঙ্গাপাড়া বিএসএফ'র টহলদল তাকে লক্ষ করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়লে এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রী জয়ন্ত কুমার সিংহ নিহত হয়। পরে নিহতের লাশ ঘটনাস্থল থেকে টেনে নিয়ে যায় বিএসএফ সদস্যরা তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে নিহতের বাবা শ্রী মহাদেব কুমার সিংহ (৪৫) ও তার বন্ধু পাশ্ববর্তী নিটালডোবা গ্রামের দরবার আলীর ছেলে বাংঠু মোহাম্মাদ। (৪০) মিলে কিছুক্ষণ পরে নিহত সন্তানের মরদেহ আনতে ঘটনাস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করলে এসময় বিএসএফ তাদের লক্ষ করে আবারো কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে। এতে তারা দুজনেই গুলিবিদ্ধ হয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ঘটনাস্থল থেকে তাদেরকে কোন রকমে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।