শীতকালীন সবজির রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনায় কৃষি উদ্যোক্তাদের করুনীয়।
সমীরণ বিশ্বাস, কৃষি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ:
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় শীতকালীন সবজি বা বারো মাসিক ফলন বা ফসলের গাছের (গোড়া- মূল কান্ড) ঢলে পড়া রোগের প্রকোপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ রোগটি দেখা দিলে দ্রুত সারা মাঠে ছড়িয়ে পড়ে এবং বুঝে ওঠার আগের জমির ফসল বিনষ্ট হয়। এ কারণে অনেক সময় চাষি ভাইয়েরা শঙ্কিত হয়ে পড়েন। টমেটো, বেগুন, মরিচ, আলুসহ প্রায় সব সবজি ফসলে ব্যাক্টেরিয়াজনিত ঢলে পড়া রোগ দেখা দেয়।
এ রোগের আক্রমণে শুরুতে গাছের উপরের দিকের কিছু পাতা নেতিয়ে পড়ে, দুয়েক দিনের মধ্যে পুরো গাছটি ঢলে পড়ে ও মারা যায়। এ রোগে গাছের শিকড়, মূল, কান্ড বা অন্য কোথাও কোনো পচন দেখা দেয় না। সাধারণত গাছের বাড়ন্ত অবস্থায় যখন ফুল ফল আসতে শুরু করে তখন রোগের আক্রমণ প্রকট হয়। ঢলে পড়া রোগের কার্যকরী কোন চিকিৎসা নেই। তাই স্প্রে না করে প্রতিরোধ ব্যবস্থা মেনে চলুন।
জমি তৈরি :
শুরু হচ্ছে সবজি চাষ মৌসূম। তাই এখনই আপনার জমির মাটি পরীক্ষা করুন এবং নিম্নের বিষয় গুলি বিবেচনায় রেখে, সবজি চাষের জন্য আপনার জমি সঠিক ভাবে তৈরী করুন। সবজি চাষের জমি তৈরীর এখনই সময়। সঠিক নিয়মে জমি তৈরী করলে আপনার সবজি খেত ঢলে পড়া রোগ থেকে বাঁচাবে।
আক্রান্ত ফসল : বেগুন,টমেটো, মরিচ, আলু, শশা ইত্যাদি।
রোগের লক্ষন ১. প্রথমে নিচের পাতা (বয়স্ক) হলুদ হয়ে মরা বা নিস্তেজ হতে শুরু করবে, ধীরে ধীরে ৪/৫ দিনের মধ্যে পুরো গাছ ঢলে পড়ে মরে যাবে।
২.কান্ড কাটলে ভেতরে বাদামী দাগ দেখা যাবে।
ঢলে পড়া রোগ থেকে বাঁচতে (১) সবজি চাষে শুরুতে মাটি শোধনের জন্য পরিমান মত চুন/ ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করুন।(২) প্রতিরোধি জাত ব্যবহার করুন। (৩) রোগ মুক্ত বীজ ও চারা ব্যবহার করুন।(৪) চারা লাগানোর পর ট্রাইকোডার্মা এবং কেঁচো সার ব্যবহার করুন। (৫) এ রোগ দেখা দিলে ঐ জমিতে আর ঐ ফসল চাষ করা যাবে না।(৬) অম্লীয় মাটিতে এ রোগ বেশি হয়। তাই ইউরিয়া এবং সালফার বেশি ব্যবহার করা যাবে না। (৭) ফিউজারিয়াম জীবাণু মাটি বাহিত। এটি জমিতে বছরের পর বছর সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। (৮) ২৫-৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় Fusarium বেশি সক্রিয় হয়। এবং (৯) গাছ আক্রান্ত হলে বাতাসের মাধ্যমে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া যন্ত্রপাতির মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।
সবজির ফিউজারিয়াম বা ঢলেপড়া রোগ ব্যবস্থাপনায় প্রতিকারের তেমন কিছু নাই ; তাই আগে থেকেই সতর্ক থাকুন, প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট সরকারি কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা মেনে চলুন।