শরীয়তপুরের ডামুড্যা জমি নিয়ে বিরোধের জেরে এক নারীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ডামুড্যা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন কাজল মাদবরের বিরুদ্ধে। এই সময় তিনি ভেঙে দিয়েছেন ওই নাড়ীর নির্মানাধীন সীমানা প্রাচীর।

বুধবার ১৩ নভেম্বর বিকেলে উপজেলার ডামুড্যা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী ছামিয়া আক্তার আয়েশা (৩৭) বৃহস্পতিবার রাতে ডামুড্যা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ডামুড্যা থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছামিয়া আক্তার আয়েশা (৩৭)  এর স্বামী মনির বেপারী একজন ইতালি প্রবাসী। তিনি আর তার স্বামী মিলে কয়েক বছর আগে পাঁচ শতাংশ জমি কেনেন। তার পাশেই রয়েছে কাজল মাদবরের বড়ভাই ডামুড্যা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রুবেল মাদবর এর জমি। বেশ কয়েক বছর যাবত রুবেল মাদবরের সাথে ছামিয়া আক্তারের জমি জমার বিরোধ চলে আসছে। অন্যদিকে ছামিয়া তার জমিতে বুধবার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এসময় রুবেল মাদবরের ছোট ভাই কাজল মাদবর এসে ছামিয়া কে বলেন, জমির সীমানা প্রাচীর নির্মাণ বন্ধ রাখো। আগে আমার জায়গাতে প্রবেশ করার জায়গা বাকি রেখে সীমানা প্রাচী নির্মাণ কর। আমার জন্য জায়গা না রাখলে তোমাদেরকে এখানে সীমানা প্রাচীর ও ঘর তুলতে দেব না। এসময় ছামিয়া রাজি না হলে। কাজল মাদবর কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলে। এবং একটি ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে ভুক্তভোগী নাড়ী ছামিয়াকে মারধর করে এবং স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়ার মাধ্যমে শীলতাহানির চেষ্টা করে। এই সময় সীমানা প্রাচীরের নির্মাশ্রমিক ও তার বোন কুলসুমা বেগম কে আটকে রাখে। পরে ভুক্তভোগী নারীর ভাই আছাদ মিয়া খবর পেয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তার বোন ছামিয়াকে উদ্ধার করে।

এই বিষয়ে ছামিয়া আক্তার আয়েশা বলেন, অনেক কষ্টের টাকায় তিল তিল করে টাকা জমিয়ে এই জমিটুকু কিনেছি। কিন্তু রুবেল মাদবরের ছোট ভাই আজকে আমার সাথে যে ধরনের আচরণ করেছে মনে হয় আমি আজ আত্মহত্যা করি। একটি ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে কাজল মাদবর তার সহযোগীদের নিয়ে আমার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিয়েছে। এখনো চোখ বন্ধ করলে সেই ভয়ংকর দৃশ্য দেখতে পাই। গতকাল রাতে আমি ঘুমাতে পারিনি।

আমার সীমানা প্রাচীরের দেয়াল ভেঙে দিয়েছে। আনুমানিক ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন কাজল আমার জমির উপর দিয়ে রাস্তা চায়। আমি জানিয়েছি নিয়ম থাকলে অবশ্যই রাস্তা পাবেন সে ক্ষেত্রে এখানকার সকল জমির মালিকরা মিলে এটা সমন্বয় করব। কিন্তু তারা আমার কথায় রাজি না। শুধু আমাকে একাই জায়গা দিতে হবে। আমি রাজি না হওয়াতে আমার সাথে এই ঘটনা ঘটলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকতে একজন নারীর সাথে এই ধরনের ঘটনা ঘটে, এটা খুবই দুঃখজনক। আমি ওদের কঠোর শাস্তি চাই।

ছামিয়া আক্তার আয়েশার ভাই আছাদ মিয়া বলেন, আমি খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসি ঘটনাস্থলে এসে দেখি কয়েকজন পুরুষ মিলে আমার বোনকে একটি ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে মারধর করছে। পরে আমি চিৎকার চেঁচামেচি করি। এই সময় আমার চিৎকার চেঁচামেচি শুনে স্থানীয়রা আসলে তারা সবাই পালিয়ে যায়। আজকে আমার বোনের সাথে যে ঘটনা ঘটলো, যেকোনো নারীর সাথে এই ঘটনা পুনরায় ঘটবে যদি এদের বিচার না হয়। প্রশাসনের উপর আমাদের আস্থা আছে। আমরা চাই, প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা কাজল মাদবর বলেন, আমি কারো গায়ে হাত দেই নি। আমি বাজার থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে  দেখি তারা কাজ করতাছে তখন তাদের জিজ্ঞেস করলে কথা কাটাকাটি হয়। আমার ভাইয়েরা আওয়ামী ও ছাত্রলীগের সাথে জড়িত তাই আমাকেও রাজনৈতিক ঝামেলায় ফেলতে চাচ্ছে তারা।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ডামুড্যা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি হাফিজুর রহমান জানান, ছামিয়া আক্তার আয়েশা নামে এক নারী মৌখিকভাবে আমাদেরকে জানিয়েছেন কাজল কাজল মাদবর নামে একজন তার নির্মানাধীন সীমানা প্রাচীর ভেঙে দিয়েছে । এবং তাকে মারধর করেছে। তাকে আমরা লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। তিনি আমাদেরকে জানিয়েছেন, আজকে একটি লিখিত অভিযোগ আমাদের কাছে নিয়ে আসবেন। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।।