সবার কথা বলে

ছাত্রদল নেতার হাত থেকে কৃষি জমি রক্ষায় জেলা প্রশাসকের কাছে কৃষকদের লিখিত অভিযোগ

0 1

ছাত্রদল নেতার হাত থেকে কৃষি জমি রক্ষায় জেলা প্রশাসকের কাছে কৃষকদের লিখিত অভিযোগ।

নিজস্ব প্রতিবেদক – শরীয়তপুর:

‘জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না’এমন সরকারি নির্দেশ থাকলেও শরীয়তপুরের বিভিন্ন উপজেলায় ফসলি কৃষি জমিগুলো পরিণত করা হচ্ছে গভীর পুকুরে। অপরিকল্পিতভাবে গত একমাসে জেলার হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে।

কৃষকরা পুকুর খনন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধনসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে একাধিক বার। কিন্তু এরপরও কোনো সুরাহা মিলছে না।

অভিযোগ উঠেছে, পুকুর খননে স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করে দালালদের মাধ্যমে অবৈধভাবে এসব পুকুর খনন করছে। এতে সাধারণ কৃষকরা তাদের কাছে পুরোপুরিভাবে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এমনকী পুকুর খনন করতে জমি ইজারা না দিতে চাইলে জমির মালিকদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে এখন।

অভিযোগ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাও ইউনিয়নের কাজলকোট গোলাম আলী সরদারের বাড়ী, ভাঙ্গা ব্রিজ, শাহআলম ফকিরের বাড়ী সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় একমাস ধরে চারটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে ২৮০ একর কৃষি জমিতে জোরপূর্বক মাছের ঘের করছেন প্রভাবশালী একটি চক্র। এতে ওই এলাকায় একদিকে জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে, অন্যদিকে বিনাশ হচ্ছে ফসলি জমি। কমছে ফসলি জমির পরিমাণও। এছাড়া উঁচু জমি গর্তে পরিণত হওয়ায় সেচ কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। নিজেদের কৃষি জমি রক্ষায় বেশ কয়েকবার উপজেলা প্রশাসনকে জানায় স্থানীয় কৃষকরা। এরপর জমি রক্ষা করতে না পেরে বিষয়টি নিয়ে গতকাল ৭ জনের নাম উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ইউনিয়নের বারোজন কৃষক।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন, ছয়গাও ইউনিয়নের কাদির শেখের ছেলে ভেদরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব রহিম শেখ(৩০), মৃত আনিছ উদ্দিন লস্করের ছেলে বাদল লস্কর(৩৫), মৃত মোখলেস ছৈয়ালের ছেলে সুমন ছৈয়াল(২৮), জাহাদালি ফকিরের ছেলে সুমন ফকির(৩৩), দরবেশ কাজির ছেলে খায়রুল কাজী(৩৩),মকবুল উঝার ছেলে রুহুল উঝা(৩৮), মৃত শামসুর রহমান বেপারীর ছেলে রনি বেপারী(৪২)।

ছয়গাও গ্রামের কৃষক সিরাজ মাল বলেন, আমাদের এলাকায় কৃষি জমি না দিতে চাইলেও জোরপূর্বক ভেদরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব রহিম শেখ, বাদল লস্কর সহ কয়েকজন জোর করে পুকুর খনন করছে। আমরা প্রতিবাদ করলে তারা হুমকি ধামকি দেয়। আমি কয়েকবার ইউএনও স্যারকে জানিয়েছি তাও কাজ হয় নি। পরবর্তীতে আমাদের এখানকার বারোজন কৃষক মিলে আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশাসন কৃষি জমি রক্ষা করে আমাদের ফিরিয়ে দেক।

কৃষক মোখলেস সরদার বলেন, এই জমি গুলোতে কিছুদিন আগেও ধান, গম, ভুট্টা সহ অনেক কিছুই চাষ করে কৃষকরা বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতো। এখন তাও সম্ভব না। আমরা নিষেধ করেছিলাম আমাদের জমি নিতে কিন্তু ওরা বললো আমরা জোর করে করবো আপনারা দিলে দেন না দিলে নাই। আমরা খামার করবোই। তাই ভয়ে কিছু বলি না ওরা প্রতিনিয়ত আমাকে ভয়ভীতি দেখায়। এখন যে হারে পুকুর খনন হচ্ছে তাতে ফসলি মাঠ আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগ করতে গেলে তাদের এলাকায় পাওয়া যায় নি। তাদের মোবাইল ফোনে ফোন দিলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেওয়ার পাশাপাশি পরবর্তীতে একাধিক বার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করেন নি।

জানতে চাইলে জেলা কৃষি কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, কৃষি জমি সুরক্ষায় আইন আছে। তবে শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর খনন করা যাবে না। পুকুর খনন বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। না হলে অচিরেই এই জেলায় খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে।

শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, ফসলি জমিতে পুকুর খননের ওপর সরকারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। কেউ ফসলি জমিতে পুকুর খনন করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.