
“ঢেউয়ের সাথে যুদ্ধ, এ যেনো জীবনের সাথে সংগ্রাম”
মোঃ সাজ্জাত হোসেন – সংবাদের পাতা:
সদরঘাটের নৌকার মাঝিরা বুড়িগঙ্গা নদীর বুকে প্রতিদিন জীবিকা নির্বাহের জন্য নৌকা চালিয়ে থাকেন।
তবে তাদের জীবনযাত্রা অত্যন্ত কষ্টকর ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ। নদীমাতৃক বাংলাদেশের জীবনযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মাঝি বা নৌকার চালকরা।
নদ-নদীর বুকে জীবিকা নির্বাহ করা এই মানুষগুলো প্রতিনিয়ত নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। তাদের জীবন যেমন কঠিন, তেমনই নদীর সঙ্গেই মিশে থাকে তাদের স্বপ্ন।
নদী তাদের জীবন, কিন্তু জীবিকার জন্য প্রতিদিন সংগ্রাম করতে হয়। মাঝে মাঝে লঞ্চের ঢেউয়ের কবলে পড়লে জীবন-মরণের প্রশ্ন তৈরি হয়।
সদরঘাট, ওয়াইজঘাট, লালকুঠি ঘাট, শ্যামবাজারসহ বিভিন্ন ঘাটে প্রায় দুই হাজার মাঝি খেয়া নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।
তাদের আয় নির্ভর করে যাত্রী পারাপারের ওপর, যা দিনে দিনে কমছে।
একজন মাঝি দৈনিক ৪০০-৫০০ টাকা আয় করতে পারেন, তবে ইজারাদার, নৌকার মালিক, পাহারা ও সিরিয়ালের জন্য বিভিন্ন খরচ মেটানোর পর হাতে খুব কমই থাকে। অনেক মাঝি মহাজনের কাছ থেকে নৌকা ভাড়া নিয়ে চালান, যেখানে দৈনিক ৩০-৪০ টাকা ভাড়া দিতে হয়।
নৌকায় যাত্রী পারাপার করে আয় হলেও, ইজারাদারদের চাঁদা, নৌকার ভাড়া, পাহারা ও সিরিয়ালের খরচ মেটানোর পর হাতে খুব কম অর্থই থাকে। ফলে, নৌকা চালালেও তাদের জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
নৌকার মাঝিদের জীবনযাত্রা অত্যন্ত কষ্টকর। তারা নৌকাতেই ঘুমান, প্রচণ্ড পরিশ্রমের পরও জীবিকার তাগিদে ভোরের আগেই জেগে ওঠেন।
নৌকায় মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারি ব্যবহার করেন। তাদের জীবন যেন ভাসমান নৌকার সাথেই ভাসছে। তবুও মনের আনন্দে তাদের দিন চলে যাচ্ছে।
জীবনের প্রতি নেই কোনো অভিযোগ। একেকজন তো জীবনের পুরোটাই পার করে দিয়েছেন এই বুড়িগঙ্গা আর কাঠের নৌকার সাথে।
মাঝিদের বেশিরভাগই দরিদ্র, তাদের স্থায়ী কোনো আয়ের উৎস নেই। নদীর নাব্যতা হ্রাস, চাঁদাবাজি, এবং আধুনিক ট্রান্সপোর্টের বিকল্প ব্যবস্থা তাদের আয় কমিয়ে দিয়েছে।
বেশিরভাগ মাঝির পরিবার আর্থিক কষ্টে দিন কাটায়। সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ কম, এবং চিকিৎসার অভাব প্রকট।
অনেক মাঝিই চান, তাদের সন্তানরা যেন শিক্ষিত হয়ে ভালো জীবন গড়ে তুলতে পারে। সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যদি মাঝিদের জন্য সহজ ঋণ, স্বাস্থ্যসেবা, ও শিক্ষা সুবিধা বাড়ায়, তাহলে তাদের জীবনমান উন্নত হতে পারে।