সবার কথা বলে

শরীয়তপুরে ভূমি কর্মকর্তার ৩ কোটি টাকার আলিশান বাড়ি, বিস্মিত স্থানীয়রা

0 11

শরীয়তপুরে ভূমি কর্মকর্তার ৩ কোটি টাকার আলিশান বাড়ি, বিস্মিত স্থানীয়রা।

আশিকুর রহমান হৃদয়
সংবাদের পাতা:

সরকার নির্ধারিত ফি থাকলেও প্রত্যেক কাজে উপ সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সুদেব দাসকে ঘুষ দিয়ে পেতে হয় জমি সংক্রান্ত সেবা। তার অফিসে খাজনা, পর্চা, নামজারিসহ জমি সংক্রান্ত সকল কাজে ঘুষ দিয়ে জনসাধারণকে পেতে হয় সেবা। ঘুষের এই টাকা দিয়ে তিনি নির্মাণ করেছেন সুবিশাল অট্টালিকাসহ আলিশান বাগানবাড়ি, একাধিক প্লট ও ফ্লাট। বর্তমানে নির্মাণাধীন ৩ কোটি টাকা মূল্যের বাড়িটি নিয়ে বিস্মিত স্থানীয়রা।

সম্প্রতি এমন অভিযোগ উঠেছে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার কাঁচিকাটা ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা সুদেব দাসের বিরুদ্ধে।

সংশ্লিষ্ট অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুদেব দাস ২০০৩ সালে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে উপ সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তিনি গোসাইরহাটের গরীবের চর, ভেদরগঞ্জের রামভদ্রপুর, চরকুমারিয়া, সখিপুর-ক, সখিপুর-খ ও সর্বশেষ কাঁচিকাটা ইউনিয়নে দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্ব পালনকালে তিনি সেবা গ্রহীতাদের নিকট থেকে খাজনা, খারিজ, নামজারিসহ বিভিন্ন কাজে সরকারি ফিয়ের চেয়ে অতিরিক্ত ৩ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করেন। এতে সেবা গ্রহীতাদের আর্থিক ক্ষতিসহ জমির মালিকানা নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে নিজ ইউনিয়ন সখিপুর-ক ভূমি অফিসে চাকুরি করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সুদেব দাস সর্বসাকুল্যে প্রায় ১১ হাজার টাকা বেতন-ভাতা পেলেও তা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার টাকা পান। একজন সরকারি কর্মচারি হয়ে সেবাগ্রহীতাদের থেকে ঘুষ গ্রহণ করে তিনি বর্তমানে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন বলেই জানেন স্থানীয়রা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুদেব দাস নামে-বেনামে বিভিন্ন জায়গায় একাধিক প্লট, ফ্লাটসহ বিপুল সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন। এসকল কিছু লোকচক্ষুর আড়ালে হলেও ভেদরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ সখিপুরের ডাক বাংলো সড়কের পাশে ৩৪ শতাংশ জমির ওপর গড়ে তুলেছেন বিশাল ডুপ্লেক্স বাড়ি। বাড়িটি বর্তমানে নির্মাণাধীন রয়েছে। বাড়ির কেয়ার টেকার ও নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাড়িটি নির্মাণে জমি, মারবেল পাথর ও অন্যান্য জিনিসপত্রসহ ৩ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। একজন ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা হয়ে কোটি টাকা মূল্যের বাড়ি তিনি কীভাবে নির্মাণ করছেন, তা নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন প্রশ্ন। ভূক্তভোগীরা জানিয়েছেন, তাদের থেকে ঘুষের টাকা নিয়েই এসব করেছেন সুদেব দাস। সুদেব দাসের বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক পত্রিকায় দুর্নীতি ও ঘুষের সংবাদ প্রচারিত হলেও প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

মাহাবুব আলম নামে একজন ভূক্তভোগী বলেন, আমি জমির নামজারির জন্য এক মাস ধরে ঘুরতেছি। এত সময় ঘুরার পরে সুদেব দাস আমাকে জানিয়েছেন টাকা লাগবে ৫ হাজার। কথা অনুযায়ী কষ্ট করে ৫ হাজার টাকাই দিয়েছি। টাকা নেওয়ার প্রায় দেড় মাস পরে সুদেব দাস আমাকে বলেছেন, আরও টাকা লাগবে। আমি গরীব মানুষ, আর টাকা দিতে পারব না। দেশে এখন বিচার নাই, কার কাছে বিচার দিমু?

ডাক বাংলো সড়কের স্থানীয় বাসিন্দা আরাফাত ছানি (ছদ্মানাম) নামে একজন বলেন, সৎপথে উপার্জন করে ছোট্ট চাকরি থেকে এধরণের বাড়ি নির্মাণ অসম্ভব। যদি সুদেব দাস দুর্নীতি না করে থাকেন, তাহলে তিনি আলাদিনের চেরাগ পেয়েছেন হয়ত। ছোট্ট একটি সরকারি চাকরি করে কীভাবে এত বড় দৃষ্টিনন্দন বাড়ি করল, তা সরকার, প্রশাসন, দুদকের তদন্ত করে খতিয়ে দেখা উচিৎ।

এসব অভিযোগের বিষয়ে সুদেব দাস বলেন, আমি সরকার নির্ধারিত ফিয়ের বেশি গ্রহণ করি না। বাড়ি ও আমার সম্পত্তির সকল তথ্য আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া আছে। আপনার কিছু জানার থাকলে আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

বিষয়টি নিয়ে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রসাশক (রাজস্ব) মো. মাসুদুল আলম বলেন, সরকারি ফিয়ের বাইরে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। যদি এসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.