
নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তার সম্পদের উৎস অজানা: দুদকে অভিযোগ।
বিশেষ প্রতিবেদক – সংবাদের পাতা:
নৌবাহিনীতে দায়িত্ব পালনকালে ছিলেন পেশাদার ও সম্মানিত লেফটেন্যান্ট কমান্ডার দায়িত্বের শেষ দিকে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। অথচ অবসরের কিছুদিন পরই খবর পাওয়া যায়, তিনি ঢাকার অভিজাত এলাকায় প্রায় ৯০ লাখ টাকা মূল্যের ২ কাটা জমি ও সেই জমিতে ৪ টি ফ্ল্যাট এর মালিক বনে গেছেন।
সেই জমির ক্রয় রসিদ, দলিল এবং রেজিস্ট্রেশন তথ্য প্রমাণ করে, ক্রেতা স্বয়ং সাবেক নৌ কর্মকর্তা। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই জমির অর্থের কোনো উৎস তার আয়কর রিটার্নে নেই। এমনকি নৌবাহিনীর অবসরের পর প্রাপ্ত অর্থ, পেনশন, গ্র্যাচুইটি মিলে এত টাকা হওয়ার সম্ভাবনাও নেই।
২০১২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি – ভূমি মিরপুর সার্কেল, ঢাকার অধীন ক্যান্টনমেন্ট ভূমি অফিস, মৌজা- জোয়ার সাহারা- জে,এল নং- সি,এস ২৭১, এস, এ ১১০, আর, এস ৬, বর্তমান ঢাকা সিটি জরিপে-৩ । খতিয়ান: সি,এস ২৭৮, এস,এ ৬৪৭, আর,এস ৪৩৭ নং মিউটেশন ১৫২৫৪, ঢাকা সিটি জরিপে ১৩৬৭৯ খতিয়ানে লিখিত। দাগ নম্বর- সি,এস ও এস,এ দাগ ৪৩১, আর,এস দাগ ৬৭৮ নং বর্তমান ঢাকা সিটি জরিপে ৩৪৩১৯ নং দাগের কাতে ০.৬৬৯.৯০ ( ছয়শত ঊনসত্তর দশমিক নয় শূন্য) অযুতাংশ বা/ ৪.০৬ ( চার দশমিক শূন্য ছয়) কাঠা জমি। এর মধ্যে আদম আলীর রয়েছে এখানে ২ (দুই) কাঠা জমি ও সেই জায়গায় ২৫০০০ স্কয়ার এর ৪ টি ফ্ল্যাট যা কোটি টাকার উপরে মূল্য।
তার সর্বশেষ আয়কর বিবরণী সংগ্রহ করে দেখা যায়, সেখানে জমির কোনো ঘোষণা নেই। স্থাবর সম্পদের তালিকায় থাকা অর্থ বা জমাকৃত টাকা এই জমি কেনার পক্ষে যথেষ্ট নয়। একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এই গোপন লেনদেন ও সম্পদের উৎস নিয়ে ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এ একটি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগ সূত্র থেকে জানা যায়, সরকারি চাকরি শেষে নৈতিকতা ও আস্থার জায়গা থেকে একজন কর্মকর্তা যদি কোটি টাকার জমি কিনে থাকেন অথচ তা ঘোষণা না করেন—তবে এটা দুর্নীতির একটি সরাসরি ইঙ্গিত। সঠিক উৎস না থাকলে এ ধরনের সম্পদ অর্জন দুর্নীতি দমন আইনে অপরাধ।
এবিষয়ে অভিযুক্ত আদম আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার প্রতিবেদক যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি কোনো সাড়া দেন নাই।
জমির অবস্থান এলাকায় খোঁজ নিতে গেলে স্থানীয়রা জানান, এই জমি তো হঠাৎ করেই কিনে ফেলেছেন সাবেক একজন সরকারি কর্মকর্তা। আমরা জানতাম তিনি সৎ ছিলেন। তাহলে এত টাকা এল কোথা থেকে?
সাবেক সরকারি কর্মকর্তা হলেও তার আয় সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের উৎস, ব্যাংক লেনদেন, সম্পদ রেকর্ড জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (NBR) রিপোর্ট করা বাধ্যতামূলক।
অন্যদিকে, নৌবাহিনী থেকে অবসরের পর সরকারি কোড অফ কন্ডাক্ট অনুযায়ী কেউ হঠাৎ করে অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জন করলে তা দুদক, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তদন্তের আওতায় পড়ে।
একটি স্বনামধন্য দুর্নীতিবিরোধী সংস্থার কর্মকর্তা বলেন, দায়িত্বে থাকা অবস্থায় কেউ যদি গোপনে অর্থ সঞ্চয় করেন এবং পরে হঠাৎ তা দিয়ে সম্পদ কেনেন, সেটা শুধু অনৈতিক না, শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই জমি ছাড়াও কর্মকর্তার নামে বা স্ত্রীর নামেও আরও জমি, অ্যাপার্টমেন্ট এবং জমাকৃত অর্থ থাকতে পারে। তবে তার কোনো অংশই এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হয়নি। সুষ্ঠ তদন্ত হলে সবকিছু বের করা সম্ভব।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক মহাপরিচালক বলেন, আমরা দুর্নীতির বিষয়ে কাজ করছি। দুদক এ–জাতীয় যেকোনো অভিযোগের বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাবে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
সাবেক বা বর্তমান, রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকা কেউ যদি জনগণের বিশ্বাস ভেঙে অর্থ গোপনে উপার্জন করে জমি কেনেন, সেটা শুধু আইনের লঙ্ঘন নয়—তা গোটা প্রশাসনিক কাঠামোকে অবজ্ঞা করা।