সবার কথা বলে

রোহিঙ্গা ভোটার তৈরির গোপন কারখানা এখন সোনাইমুড়ী

0 2
রোহিঙ্গা ভোটার তৈরির গোপন কারখানা এখন সোনাইমুড়ী: প্রশাসনিক ছত্রছায়ায় জালিয়াত চক্রের বিস্তার।
মো. জাহিদুল ইসলাম – সোনাইমুড়ী প্রতিনিধি:

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী এখন ভুয়া জন্মনিবন্ধন ও রোহিঙ্গা নাগরিকদের ভোটার বানানোর এক বিপজ্জনক হটস্পটে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনিক ছত্রছায়া এবং কিছু অসাধু ইউনিয়ন পরিষদ কর্মকর্তার সহায়তায় একটি শক্তিশালী জালিয়াত চক্র দীর্ঘদিন ধরে এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এটি এক বড় হুমকিতে রূপ নিচ্ছে।

গত ৩ জুন সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাচন অফিসে ভোটার হতে এসে আটক হয় এক রোহিঙ্গা যুবক নুরুল আমিন ও তার সঙ্গে থাকা দুই দালাল। তদন্তে বেরিয়ে আসে, তারা ভুয়া জন্মনিবন্ধন ব্যবহার করে পাসপোর্ট ও ভোটার আইডি তৈরির চেষ্টা করছিল।

এই ঘটনার জের ধরে মামলা দায়ের করা হয় নদনা ইউনিয়নের সচিব, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আজগর হোসেন, জয়াগ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহিন উদ্দিনসহ মোট সাতজন দালালের বিরুদ্ধে। এছাড়া কৌশল্যারবাগের সাইমন, আজাদ, ভাওরকোট গ্রামের বেলায়েত হোসেন এবং সেলিম নামে আরও কয়েকজনকে এ চক্রের মূল সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এর মাত্র কয়েকদিন পর, ২৯ জুন ইউএনও নাসরিন আক্তারের স্বাক্ষর জাল করে তৈরি জন্ম সনদ নিয়ে ৪ যুবক ভোটার হতে এলে তাদেরও আটক করা হয়। কিন্তু চমকপ্রদভাবে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি ব্যবস্থা না নিয়ে কেবলমাত্র অর্থদণ্ড দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়—যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, “একজন ইউএনও-র স্বাক্ষর জাল করার মতো অপরাধে কেবল জরিমানা যথেষ্ট নয়। প্রশাসনের এই নমনীয়তা ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্যোগ ডেকে আনতে পারে।”

সোনাইমুড়ী বাজারের বেশ কিছু কম্পিউটার দোকান জাল জন্মনিবন্ধন তৈরির কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব দোকান জন্মতারিখ পরিবর্তন করে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট তৈরি করে দিচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান। অভিযোগ রয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদের কিছু সচিব ও টেকনিশিয়ান এই প্রক্রিয়ায় জড়িত।

নদনা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আজগর হোসেন স্বীকার করেছেন, অনলাইনে জন্মনিবন্ধন এডিট করে ভুয়া সনদ তৈরি হচ্ছে এবং এতে রোহিঙ্গাদের আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার স্বীকার করেন, তার স্বাক্ষর জাল করে জন্মনিবন্ধন তৈরি করায় ৪ যুবককে জরিমানা করা হয়েছে এবং কম্পিউটার দোকানগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে স্থানীয়দের দাবি, অর্থদণ্ড নয়—এমন অপরাধের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এ ধরনের অপরাধ বন্ধ হবে না। নইলে সোনাইমুড়ী হয়ে উঠবে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এক ভয়াবহ ঝুঁকির নাম।

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.