
ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে চাঁদা আদায় করেন অফিস সহকারী।
জেলা প্রতিনিধি শরীয়তপুর – সংবাদের পাতা:
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে হোটেল ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ের এক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় উপজেলায় ব্যবসায়ী মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান উকিল ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ের অফিস সহকারী (দপ্তরী) হিসেবে কর্মরত।
সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুরে ভেদরগঞ্জ বাজার এলাকায় অবস্থিত ‘জোয়ার-ভাটা হোটেলে’ ঢুকে মালিক আব্দুর রহমান মল্লিককে মোবাইল ফোন ধরিয়ে দিয়ে কথা বলতে বলেন হাবিবুর রহমান।
এসময় ফোনের অপর প্রান্তে ওই ব্যক্তি নিজেকে ভেদরগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দেন। এ সময় তার হোটেলে ‘অনিয়ম’ রয়েছে বলে দাবি করে হুমকি দেন এবং ভেদরগঞ্জের ২০ টি হোটেলের তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে জানান। তার খাবারের মান ও অসহায়ত্বের বিবেচনা করে তার হোটেল বন্ধ না করে অভিযানের তালিকা থেকে নাম কেটে দেওয়ার কথা বলে ৩০ হাজার টাকা দাবী করেন এবং ৩০ হাজার টাকা দপ্তরী হাবিবুর রহমানের কাছে দেওয়ার জন্য বলেন। এ সময় হোটেল মালিক আব্দুর রহমান মল্লিক বলেন, তার কাছে নগদ টাকা নেই। তখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মালিককে এক মাস হোটেল বন্ধ ও এক লক্ষ টাকা জরিমানা করার হুমকি দেন। হোটেল মালিক ভয়ে তাকে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মাধ্যমে বিশ হাজার ছয়’শ টাকা দিয়ে দেন। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিষয়টি জানাজানি হলে ভূয়া ম্যাজিস্ট্রেটের বিষয়টি সামনে আসলে বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে হোটেল ব্যবসায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে অফিস সহকারী হাবিবুর রহমানের কাছে টাকা ফেরত চান। এসময় হাবিবুর রহমান টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো তার দোকান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। অভিযুক্ত হাবিবুর রহমানোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিল-কারখানা, বেকারি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হোটেল, ইটভাটা, অবৈধ ড্রেজার, আইসক্রিম ফ্যাক্টরি সহ নানা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও ঘটনার দিন (২৩ জুলাই) ভেদরগঞ্জ উপজেলার প্রায় ২০টি হোটেল ও রেঁস্তোরা থেকে একই কায়দায় মোটা অংকের টাকা দাবী করেন।
বিষয়টি নিয়ে বুধবার সকালে ভেদরগঞ্জ বাজারে অবস্থিত “জোয়ার-ভাটা” হোটেলে গিয়ে কথা হয় ভুক্তভোগী হোটেল মালিক আ: রহমান মল্লিকের সাথে। তিনি বলেন, “গত বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুর এক লোক হঠাৎ এসে নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেটের লোক বলে পরিচয় দেন। তিনি বলেন, আমার হোটেলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, লাইসেন্স নেই এসব অভিযোগে মামলা হয়েছে। আমি তাকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি, কিন্তু তিনি কাগজপত্র দেখতে চান এবং ভয়ভীতি দেখান। এক পর্যায়ে তার মোবাইল দিয়ে আমাকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তার সাথে কথা বলিয়ে দেয়। এরপর তিনি মোবাইলে আমাকে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে ও দোকান বন্ধ করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে আমার কাছ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা জরিমানা দাবী করে। পরে আমি বাধ্য হয়ে তাকে বিশ হাজার ছয়’শ টাকা বিকাশের মাধ্যমে দেই। পরে জেনে শুনে হতবাক হই তিনি কোনো ম্যাজিস্ট্রেট নয় বরং উপজেলা প্রশাসন অফিসের একজন অফিস সহকারী (দপ্তরী)। আমি বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে তার কাছে টাকা ফেরত চাইতে গেলে আমাকে দোকান বন্ধ সহ মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। বিষয়টি আমি ভেদরগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্যারকে জানিয়েছি। আমি আমার টাকা ফেরত ও ন্যায় বিচার চাই।
বুধবার বেলা ১২টার দিকে কথা হয় স্থানীয় আরেক হোটেল ব্যবসায়ী মো. আরিফ মিয়া’র সাথে। তিনি বলেন, “ঐ দিন বিকালে আমার দোকানে এসে ও বিভিন্ন অনিয়মের কথা বলে বিশ হাজার টাকা দাবী করে। কিন্তু আমি বিষয়টি পাত্তা না দিয়ে টাকা দিতে রাজী হয়নি। পরে আমাকে হুমকি ধামকি দিয়ে চলে যায়। আমরা তো সবসময় সরকারি কর্মকর্তাদের সম্মান করি। কিন্তু একজন অফিস সহকারী যদি ম্যাজিস্ট্রেট সেজে টাকা নেয়, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? এভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা নেয়া মানে স্পষ্ট চাঁদাবাজি। আমরা চাই প্রশাসন এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করুক এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুক।”
অভিযুক্ত অফিস সহকারী হাবিবুর রহমান উকিল বলেন,“আমি কখনোই নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিইনি। আমি শুধু হোটেলে গিয়েছিলাম। আমাকে এক স্যার ফোন করে বলেছে ভেদরগঞ্জের সব হোটেল রেস্তোরাঁ মালিকদের ফোন নাম্বার সংগ্রহ ও আমার মোবাইল দিয়ে কথা বলিয়ে দেয়ার জন্য বলেন। এরপর কে টাকা নিয়েছে আমি তা জানি না। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা পুরোপুরি মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক।
এ বিষয়ে ভেদরগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মোহাম্মদ মোজাহেরুল হক বলেন,“বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। এটি গুরুত্বর অভিযোগ। তদন্ত করে সত্যতা মিললে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও হোটেল মালিকদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে কারো কথায় এভাবে প্রভাবিত না হয়ে আরো সতর্ক হওয়া।”