নড়িয়ার দেড় কিলোমিটার কোয়ারাক খাল প্রভাবশালীদের দখলে: জলাবদ্ধতায় ৫০ একর ফসলী জমি।
শরীয়তপুর প্রতিনিধি - সংবাদের পাতা:
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার লক্ষীপুর থেকে কোয়ারাক মালত বাড়ী পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার খালের ওপর বাঁধ নির্মাণ করে দখল মহোৎসব চলছে। শতবর্ষী এ খালের পানি প্রবাহ বন্ধ করে নির্মাণ করেছেন বাড়ি ও পাকা স্থাপনা। ফলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অন্তত দুই শতাধিক কৃষক পানি নিষ্কাশন নিয়ে বিপদে পড়েছেন। এতে একদিকে খালের লাগোয়া অন্তত ৫০ একর ফসলী জমিতে চাষাবাদ করা দুস্কর। অন্যদিকে, পানি আটকে পচে দূর্গন্ত ছড়াচ্ছে। আর পরিবেশ হচ্ছে বিপন্ন। এসব অবৈধ দখলকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
সরেজমিন গিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নড়িয়া উপজেলার বিঝারী ইউনিয়নের লক্ষীপুর থেকে কোয়ারাক মালত বাড়ী পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার খাল রয়েছে। তবে বিভিন্ন সময় প্রভাবশালীদের দখল দুষনে অস্তিত্ব সংকটে মৃত প্রায়। খালটি শেষ প্রান্তেই রয়েছে অন্তত ৫০ একর ফসলী জমির মাঠ। কৃষকরা আগে যেখানে বছরে দুইবার চাষাবাদ করতো, এখন সেখানে একবার চাষাবাদ করাই কঠিন। এখন শুধু ওই ৫০ একর জমিই নয়, আশপাশের আরও অন্তত ২'শ একর জমিতে এর প্রভাব পড়েছে। এক সময় সড়ক পথে চলাচলের ব্যবস্থা ভালো না থাকায় বর্ষা মৌসুমে মানুষ ছোট-বড় নৌকায় পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়া ও চলাচল করত। কৃষকের শস্য উৎপাদনে এ খালের ভূমিকা ছিল। সেই খাল দখলদারের কবলে পড়ে হারিয়েছে গতি। দেখা গেছে, দেড় কিলোমিটার খালটির অন্তত ২০টি পয়েন্ট বাঁধ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় প্রভাবশালী যাদের বাড়ির সামনেই খাল রয়েছে তারা বালু অথবা মাটি দিয়ে ভরাট করে ফেলেছে। তবে কিছু স্থানের মানুষ নিজেরা বাঁশের সাঁকো কিংবা কালবার্ট দিয়ে যাতায়াত করে। পানি অনেক স্থান পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। ফলে খালের পানি দুর্গন্ধ হয়ে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। এদিকে ফসলী জমি থেকে পানি না নামায় কৃষক আর্থিক ক্ষতি সম্মুখিন হচ্ছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় অনেকেই বলেন, এ খাল দিয়ে বছরের প্রায় সময় একমাত্র যানবাহন ছিল নৌকা। কারন ভোজেশ্বর ও গোলারবাজার ও দিনারার হাট ছিল আশে পাশের সবচেয়ে বড়। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফষল নৌ পথে এসে এসব হাটে বিক্রি করত। আবার গ্রামের মানুষ সাপ্তাহিক হাটে বাজার সদাই করে বাড়ি ফিরত।
তারা আরও বলেন, স্থানীয় এক শ্রেণীর প্রভাবশালীরা দেড় কিলোমিটার খালটির বেশির অংশই দখল করে ফেলেছে। এতে করে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের খাদ্য উৎপাদনও কম হচ্ছে। আর জলাবদ্ধতার কারণে পানি দূষিত হয়ে নানান রোগবালাই দেখা দিয়েছে ও মশার উপদ্রব বেড়েছে। তাই অবিলম্বে এই খালটি উদ্ধার করে পানি প্রবাহ সচল করার দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, খালের ওপর অবৈধ বাঁধ নির্মাণ বা দখল একটা অপরাধ। কোয়ারাক খাল দখলের বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। তবে, তদন্ত করে সত্যতা পেলে তা উচ্ছেদ করা হবে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।