সবার কথা বলে

লুভরের স্বীকৃতি: শিল্পের শিখরে এক বাংলাদেশি

0 9

লুভরের স্বীকৃতি: শিল্পের শিখরে এক বাংলাদেশি।

নিজস্ব প্রতিবেদন:

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য এক গর্বের মুহূর্ত। ফরিদপুরের মাটি থেকে উঠে আসা এক তরুণ আলোকচিত্রী নাফিজ ইসলাম এখন স্থান করে নিয়েছেন বিশ্বখ্যাত লুভর মিউজিয়ামে। তাঁর অনবদ্য আলোকচিত্র সিরিজ ‘Shadows of History’-এর দুটি ছবি সংগ্রহ করেছে প্যারিসের এই ঐতিহাসিক জাদুঘর।

এই অর্জন কেবল একজন শিল্পীর স্বপ্নপূরণ নয়; এটি বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। যেখানে ইতিহাস, মানবিকতা ও শিল্পের মেলবন্ধন নতুন মাত্রা পেয়েছে।

ছবির ফ্রেমে ইতিহাসের প্রতিধ্বনি

‘Shadows of History’ সিরিজটি শুধুমাত্র আলোকচিত্র নয় এটি সময়ের এক জীবন্ত দলিল। প্রতিটি ছবিতে ফুটে উঠেছে মানুষের জীবনসংগ্রাম, আবেগ ও সৌন্দর্যের এক অপূর্ব প্রকাশ।

সেই সিরিজের একটি ছবিতে দেখা যায় একজন বৃদ্ধ লোক গরুকে জলাশয় থেকে টেনে তুলছেন। দৃশ্যটি যেমন সরল, তেমনি গভীর মানবিক বার্তায় সমৃদ্ধ। এটি বাংলার গ্রামীণ জীবন, মমতা ও পরিশ্রমের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এ যেন এক নিঃশব্দ অথচ শক্তিশালী আর্তনাদ সময়ের, সমাজের, মানুষের।

ফরিদপুর থেকে ফ্রেমে বিশ্বদৃষ্টি

নাফিজ ইসলামের শৈল্পিক যাত্রার শুরু ফরিদপুর শহরের কাদামাটি ঘেঁষা পথ থেকে। শৈশবেই নাট্যচর্চার প্রতি আকর্ষণ তাঁকে যুক্ত করে নাট্যব্যক্তিত্ব মুন্সী মুহাম্মদ আলী রুমির সঙ্গে। সেখান থেকেই শুরু ‘বৈশাখী নাট্যগোষ্ঠী’ এবং পরবর্তীতে ‘বিনোদন নাট্যদল ফরিদপুর’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাঁর মঞ্চভ্রমণ।

মঞ্চের আলো-আঁধারিকে ভালোবেসে ধীরে ধীরে জন্ম নেয় ক্যামেরার প্রতি ভালবাসা। মঞ্চনির্ভর অনুভব তাঁর আলোকচিত্রে পরিণত হয় জীবনের সূক্ষ্ম ছায়া ও রঙের অনুবাদে।

পেশাগত জীবনের পথচলা

২০১৮ সালে ঢাকায় পেশাগতভাবে ফটো জার্নালিজম শুরু করেন নাফিজ ইসলাম। দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় কাজ করার পাশাপাশি যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে। তাঁর নিজস্ব উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন ‘শতফুল আলোকচিত্র’, যার মাধ্যমে সংরক্ষিত হচ্ছে হাজারো সময়-দলিল—মানুষের জীবন, ইতিহাস, আবেগ ও যন্ত্রণার ছবি।

লুভরের মঞ্চে একজন বাংলাদেশি

লুভর মিউজিয়ামের আধুনিক ফটোগ্রাফি বিভাগ থেকে যখন ‘Shadows of History’ সিরিজের দুটি ছবি সংগ্রহ করা হয়, তা ছিল নিঃসন্দেহে এক যুগান্তকারী স্বীকৃতি। কারণ লুভরে স্থান পাওয়া মানে বিশ্ব শিল্পভুবনের সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্যতা।

নাফিজ ইসলাম বলেন
“ছবির মতোই বাস্তব ও মানবিক মুহূর্তগুলো সংরক্ষণ করা উচিত, যেমনটি লুভরের দেয়ালে প্রদর্শিত হয়। আমার ছবি মানুষ, তাদের শ্রম, সংগ্রাম ও সৌন্দর্যকে শিল্পের মর্যাদা দেওয়ার একটি প্রয়াস।”

একজন আলোকচিত্রীর দায়বদ্ধতা ও অনুপ্রেরণা

নাফিজ ইসলামের এই অর্জন প্রমাণ করে সৎ দৃষ্টিভঙ্গি, মানবিকতা আর গভীর পর্যবেক্ষণ থাকলে একজন আলোকচিত্রীও ইতিহাসের স্রষ্টা হয়ে উঠতে পারেন।

তিনি শুধু বাংলাদেশের নয় বিশ্বের প্রতিটি ক্ষুদ্র শহরের স্বপ্নদেখা শিল্পীর প্রতীক হয়ে উঠেছেন। ভবিষ্যতের প্রজন্মকে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথে চলার জন্য দরকার সত্যনিষ্ঠা, সৃষ্টি আর সাহস।

ইতিহাসের ছায়ায় আঁকা আত্মকথা

‘Shadows of History’ কেবল একটি সিরিজ নয়—এটি সময়ের ছায়ায় গড়া এক শিল্পীর, এক জাতির এবং এক মানসিক দর্শনের ছবি। এই অর্জন আমাদের শেখায়—বাংলাদেশি শিল্পও ছুঁতে পারে বিশ্বের সর্বোচ্চ শিখর।

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.