সবার কথা বলে

সমাজে বেড়েই চলছে বিবাহ বিচ্ছেদ

0 280

সমাজে বেড়েই চলছে বিবাহ বিচ্ছেদ

শামীম আহম্মেদ জয়

মতলব উত্তর চাঁদপুরঃ

শিক্ষিত ও অভিজাত পরিবারে তালাকের ঘটনা ঘটছে অহরহ। তবে সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি ও পরিবারগুলোতে তালাক এখন সাধারণ ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছে’ আরবি শব্দ। গত ২০২১ সলের হিসেব অনুযায়ী দিনে গড়ে ৩৭টি তালাকের আবেদন করা হচ্ছে। এর মধ্যে গড়ে ৭০ শতাংশ আবেদন করছেন নারীরা। তালাকের আবেদনে সমঝোতা হচ্ছে গড়ে ৫ শতাংশেরও কম। যতোগুলো তালাকের ঘটনা ঘটছে তার কারণগুলো প্রায় একই। যৌতুকের জন্য নির্যাতন, মাদকাসক্তি, স্বামীর সন্দেহবাতিক মনোভাব, পরনারীর সঙ্গে সম্পর্ক, পুরুষত্বহীনতাসহ বিভিন্ন কারণ। অন্যদিকে বদমেজাজ, সংসারের প্রতি উদাসীনতা, স্বামীর অবাধ্য হওয়া, ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী না চলা, সন্তান না হওয়ায় স্ত্রীকে তালাক দিচ্ছেন স্বামীরা। বাংলা অর্থ হচ্ছে বর্জন, প্রত্যাখ্যান, বিবাহ-বিচ্ছেদ ইত্যাদি। ইসলামি আইন মতে সহজ কথায়, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানোকে তালাক বলা হয়। তালাক হলো- দুনিয়ার সবচাইতে নিকৃষ্টতম বৈধ কাজ। তাই এর ব্যবহার একেবারেই নিয়ন্ত্রিত হওয়া জরুরি। এই জন্যই শরীয়ত তালাকের অধিকার দিয়েছে পুরুষকে। যাতে সাধারণ তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপকভাবে তালাকের ছড়াছড়ি না হয়। কেননা চিন্তাশক্তি, বিচার-বিবেচনার সামর্থ্য ও ধৈর্যের গুণ নারীদের তুলনায় পুরুষদের মাঝে অনেক বেশি। তবে কোনো স্বামী যাতে স্ত্রীদেরকে আটকে রেখে তার ওপর জুলুম-নির্যাতন করতে না পারে সেজন্য ইসলামি শরীয়ত ‘তাফয়ীজুত তালাক’ এর নিয়ম প্রবর্তন করেছে।

তাফয়ীজুত তালাকের অর্থ হলো স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে নিজ নফসের ওপর তালাক গ্রহণের অধিকার দেয়া। ইংরেজিতে যাকে ডিভোর্স (উরাড়ৎপব) বলা হয়। কাবিন নামার ১৮ নং ধারাটি মূলত এই উদ্দেশ্যেই রাখা হয়েছে, যাতে স্ত্রী তার অধিকার হতে বঞ্চিত না হয়। এই অধিকার শর্তসাপেক্ষেও হতে পারে, আবার বিনা শর্তেও হতে পারে। যদি শর্ত সাপেক্ষে হয় তাহলে সেই শর্ত পাওয়া গেলেই কেবল স্ত্রী তালাক গ্রহণের অধিকারী হবে। অন্যথায় নয়।

এখানে উল্লেখ্য যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে তালাক দানের ক্ষমতা একমাত্র স্বামীর। স্ত্রী তালাক দানের ক্ষমতা সংরক্ষণ করে না। স্ত্রী হচ্ছে তালাকের পাত্রী। তাই স্ত্রী স্বামী কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতা বলে নিজের নফসের ওপর তালাক গ্রহণ করবে। সে স্বামীকে তালাক দিবে না। আমাদের সমাজে অনেককে তালাক নামায় লিখতে দেখা যায়, ‘স্বামী কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতা বলে স্বামীকে তালাক দিলাম’ এভাবে লেখা সঠিক নয়। এই পদ্ধতিতে লিখলে তার ওপর তালাক পতিত হবে না; বরং সে যথারীতি তার স্ত্রী হিসেবেই থাকবে। মহিলা যদি অন্যত্র বিবাহ বসে তাহলে তার দ্বিতীয় বিবাহও শুদ্ধ হবে না। দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে থাকাটা তার জন্য যিনা বা ব্যভিচারের গুনাহ হবে। তাই এভাবে লিখতে হবে যে, ‘আমি কাবিন নামার ১৮নং ধারায় স্বামী কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতা বলে নিজ নফসের ওপর তালাক গ্রহণ করলাম’। ইসলামের দৃষ্টিতে তালাক বা ডিভোর্স অত্যন্ত নিন্দনীয়। দু’জন অপরিচিত নর-নারী যেমন হাজারো আশা-আকাঙ্কা ও রঙ্গিন স্বপ্ন নিয়ে আমৃত্যু একত্রে থাকার লক্ষ্যে পবিত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় ইসলামও চায় তাদের এই পবিত্র বন্ধন অটুট থাকুক। তারপরও বিভিন্ন প্রয়োজনে স্বামী-স্ত্রী অনেক সময় তালাক বা ডিভোর্সের দ্বারস্ত হয়ে থাকে। তবে বিবাহ বিচ্ছেদ তালাকের মাধ্যমে হোক বা ডিভোর্সের মাধ্যমে হোক, ইসলামি শরীয়ত তা অপছন্দ করেছে। ইসলাম চায় স্বামী-স্ত্রীর মধুর সম্পর্ক চিরদিন অটুট থাকুক। তাই ইসলাম তালাক ও ডিভোর্সকে নিরুৎসাহিক করেছে। পবিত্র কুরআনের একটি বাণী বা হাদীসের একটি উদ্বৃতিও এমন পাওয়া যাবে না যা তালাক বা ডিভোর্সের প্রতি উৎসাহিত করে। তালাক দেয়া জায়েজ হলেও তা জঘন্য ঘৃণিত কর্ম। নিম্মের হাদীস দ্বারাই পাঠক তা উপলব্ধি করতে পারবেন।

১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তালাক ইসলামের বৈধ প্রথার মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রথা।’ [আবু দাউদ : হা. ২১৭৪]

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.