শরীয়তপুর জেলায় বি আর টিএ অফিসে অনিয়মের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযান।
শরীয়তপুর প্রতিনিধি
এবি এম জিয়াউল হক টিটু:
শরীয়তপুর জেলায় বি আর টিএ অফিসে কক্ষে পেশাদার ও অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ রেজিষ্ট্রেশন, মালিকানা বদলী-যাচাই, ইত্যাদি সেবা নিতে গ্রাহকের অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আজ এই অভিযান পরিচালনা করেন দুদক কর্মকর্তা।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত শরীয়তপুর বি আর টিএ অফিসে অভিযান পরিচালনা শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাদারীপুরের একটি টিম।
দু–দক সূত্রে জানা যায়, সংস্থাটির হটলাইন নম্বর ১০৬– এ অভিযোগ ছিলো যে রেজিষ্ট্রেশন, মালিকানা বদলী-যাচাই,পেশাদার-অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ ইত্যাদি সেবা নিতে বিআরটিএ অফিসকে গ্রাহকের অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে শরীয়তপুরের বিআরটিএ অফিসে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানের সময় কাওসার হাওলাদার(৩০) নামে এক যুবক দু–দক টিমের কর্মকর্তার নিকট এ অভিযোগ করেন।
তিন বছর আগে বিআরটিএ অফিসের কর্মচারী পরিচয়ে ওবায়দুর নামে এক লোক তার কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা নিয়ে লাইসেন্স করে দেননি। পরে কাওসারের মোবাইল ফোন থেকে দালাল চক্রের সদস্য ওবায়দুলকে কল করা হলে পরবর্তী একটি চায়ের দোকানে যেতে বলেন ওবায়দুল। কাওসারের সাথে ছদ্মবেশে দু–দকের টিম ওই চায়ের দোকানে গিয়ে ওবায়দুরকে হাতেনাতে ধরে বিআরটিএ অফিসের সহাকারী পরিচালক রুমে নিয়ে আসেন।
ভূক্তভোগী কাওসার হাওলাদার বলেন, তিন বছর আগে বিআরটিএ অফিসে এসেছিলাম লাইসেন্স করতে। অফিসে আসার পরে ওবায়দুল নামে এক লোকের সাথে পরিচয় হয় আমার। তিনি তখন আমাকে বলেন, লাইসেন্স করতে তো ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাগে। আপনি ৯ হাজার টাকা দেন। ওনার কথা মত আমি ৭ হাজার টাকা তাকে দিয়েছি। টাকা নিয়েও উনি আমার কাজ করেননি। দুদক টিমের সহযোগিতায় আমার টাকা আমি ফেরত পেয়েছি আজ।
বিআরটিএ অফিসের দালাল চক্রের সদস্য ওবায়দুর রহমান বলেন, লোকবল সংকটের কারণে মৌখিক ভাবে আমাদের অফিস সহায়ক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। লোকবল সংকট থাকার কারণে আমরা কাজ করতাম। বিআরটিএ ঘুষ চক্রের সাথে সহকারী পরিচালক, ইন্সপেক্টর সবাই জড়িত। আমাদের শুধুমাত্র ব্যাবহার করা হয়। ব্যাবহার হতে গিয়ে কিছু স্বার্থে এতদিন কাজ করেছি, এখন অফিসে লোক নিয়োগ হওয়ায় আমাদেরকে চলে যেতে বলেছে , আমরা এখন আর অফিসে আসি না। কিন্তু এখনও বিআরটিএ অফিসের ঘুষ বাণিজ্যের সাথে সহকারী পরিচালক, ইন্সপেক্টরসহ সবাই জড়িত। রেজিষ্ট্রেশন, মালিকানা বদলী-যাচাই,পেশাদার-অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স, রিনিউ লাইসেন্স সকল ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে ওবাইদুল বলেন, কোনো সেবাগ্রহীতা আসলে সহকারী পরিচালক, ইন্সপেক্টর স্যার একটা চার্জ নেয়, ওই চার্জের ওপর ভিত্তি করে আমরা টাকা দাবি করি। তাদের বিভিন্ন ফাইলে বিভিন্ন ধরণের চার্জ, তবে নির্দিষ্ট কোনো চার্জ নেই। অফিসারদের চার্জের ওপর ভিত্তি করেই, অতিরিক্ত টাকা লেনদেন করা হয়। ফাইলে যত ভুল থাকুক, অতিরিক্ত টাকা দিলে সরকারের আইন অনুযায়ী কাজটা সম্পন্ন করে দেন তারা।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) শরীয়তপুরের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত) মো. নুরুল হোসেন বলেন, দুদক টিম সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এসেছেন। তারা তাদের কাজকর্ম করে গেছেন। আমি বিআরটিএ শরীয়তপুরে যোগদানের পর এখানে কোনো দালাল নেই। যে অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক এসেছে, সেই অভিযোগ আমি যোগদান করার অনেক আগের। মোটরযান পরিদর্শক মেহেদী হাসানের সাথে দালালের সম্পর্ক রয়েছে কি না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তার বিষয়ে যদি ওমন কিছু পাওয়া যায়, তবে তা তদন্ত সাপেক্ষে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আমি যোগদানের আগে কিছু গ্রাহককে হয়রানির দৃষ্টান্ত আছে। এখন আর কোনো গ্রাহক হয়রানীর শিকার হয় না।
অভিযান শেষে দুদক সমন্বিত মাদারীপুর অফিসের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, এক গ্রাহক বিআরটিএ শরীয়তপুর অফিস থেকে বিভিন্ন সময় হয়রানী ও ঘুষ লেনদেনের শিকার হোন, এরই প্রেক্ষিতে আমাদের হেড অফিস থেকে আমাদেরকে অভিযান পরিচালনার জন্য নির্দেশনা প্রদান করলে, আমরা অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সত্যতা যাচাই করে দেখেছি। অভিযানে প্রাপ্ত রিপোর্ট আমরা হেড অফিসে প্রেরণ করব। এরপর মাননীয় কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। আপনারা দেখেছেন অভিযানের সময় একজন দালালকে আমরা ধরেছি। যে সেবা গ্রহীতা থেকে ওই দালাল টাকা নিয়েছিল, সেই সেবাগ্রহীতাকে আমরা টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।